রংপুর তাজহাট জমিদার বাড়ি

রংপুর তাজহাট জমিদার বাড়ি
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কুমার গোপাল লাল রায় এই চোখ জুড়ানো প্রাসাদটি নির্মাণ করেন প্রাসাদটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০বছর ।প্রাসাদটি রংপুর শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ,বলছি ইতিহাসের স্মৃতি জরিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা রংপুর তাজহাট জমিদার বাড়ির কথা।আজ আমরা ঘুরে আসব রংপুরের দৃষ্টিনন্দন এই প্রাসাদ তাজহাট জমিদার বাড়ি থেকে।
মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ এর সময় পাঞ্জাব থেকে শেখ বংশীয় মান্না লাল রায় রংপুরের মাহিগঞ্জে আসেন এবং সে সময় তিনি স্বর্ণ ও দামি রত্নখচিত টুপি অর্থাৎ মুকুট বিক্রি করা শুরু করেন,তার এই মনমুগ্ধকর তাজ বা মুকুট এর কারণে এই এলাকাকে তাজহাট নামে অভিহিত করা হয় ।
মান্না লাল রায় তার জীবন দশায় অনেক ভূসম্পত্তির মালিক হন এবং ক্রমশই রংপুরের অনেক এলাকা নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসেন । প্রভাব ও বৃত্তের জোরে একসময় তাজহাটে তিনি প্রতিস্টা পান জমিদার হিসেবে। মান্না লাল রায়ের ত্রিতিও প্রজন্ম নাতি ধনপদ লাল রায় বিয়ে করেন রতন লাল রায় এর নাতনিকে ,পরে ধনপদ লাল রায়ের সুত্তধর নাতি উপেন্দ্র লাল রায় অল্প বয়সে মারা যাওয়ার কারণে জমিদারির দায়িত্ব তার কাকা গিরিধারী লাল রায়ের হাতে এসে পড়ে,নিঃসন্তান গিরিধারী লাল রায় সেসময় দত্তক নেন বাঙালি ছেলে গোবিন্দ লাল রায় কে।
গোবিন্দলাল ১৮৭৯ সালে জমিদারি লাভ করেন তিনি স্বাধীনচেতা হওয়ার কারণে খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এর ফলে ১৮৮৫ সালে রাজা ১৮৮৯ সালে রাজা বাহাদুর এবং ১৮৯৬ সালে মহারাজা উপাধি গ্রহণ করেন। গোবিন্দ লাল রায় ও তার ছেলে গোপাল লাল এর সময় তাজহাট জমিদারবাড়ি সমৃদ্ধি লাভ করে ১৮৯৭ সালে। গোবিন্দ লাল রায় এর মৃত্যুর পর তার পুত্র কুমার গোপাল লাল রায় জমিদারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, ধারণা করা হয় কুমার গোপাল লাল রায় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অর্থাৎ ১৯১৭ সালে এই চোখ জুড়ানো প্রাসাদটি নির্মাণ করেন প্রাসাদটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর।
পূর্বমুখী দোতালা বিশিষ্ট এই প্রাসাদটি দৈর্ঘ্য 76.20 মিটার এবং প্রবেশপথ থেকে দুই তলা পর্যন্ত 15 দশমিক 24 মিটার চওড়া ৩১ টি ধাপ বিশিষট ১ টি সিরি রয়েছে এই দীর্ঘ বড় সিঁড়িগুলো ইতালি ও মার্বেল পাথরের তৈরি ,রাজবাড়ীর পশ্চাৎ অংশে আরো একটি গুপ্ত সিঁড়ি রয়েছে তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে এই সিরি অনেক আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।প্রাসাদটি্তে সর্বমোট বাইশটি কক্ষ রয়েছে । প্রাসাদের নিচতলায় প্রবেশপথের পশ্চাতে ১৮.৯ x ১৩.৭২ মিটার মাপের হলঘর রয়েছে, প্রাসাদের অভ্যন্তরে পুরোভাগ জুড়ে রয়েছে ০৩ মিটার প্রশস্ত বারান্দা এছাড়া উত্তর বাহুর মধ্যবর্তী স্থানে এবং পূর্ব বাহুর দক্ষিণ প্রান্তে উপরতলায় ওঠার জন্য দুইটি কাঠের সিঁড়ি রয়েছে। সামনে রয়েছে লোহার কাঠামোইয় জরানো বড় একটি বাগান সেই বাগানের বুকে ক্লান্তিহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে একটি ফোয়ারা কালের বিবর্তনে ফোয়ারার সুন্দরতা কিছুটা মলিন হলেও তার জৌলুস এখনো কমেনি প্রাসাদের চত্বরে রয়েছে বিশাল খালি মাঠ , গাছের সারি এবং প্রাসাদে দুই পাশে রয়েছে পার ঘেরা দুটি পুকুর। ১৯১৭ সালে শুধু এই প্রাসাদ নির্মাণ নয় উচ্চশিক্ষিত গোপাল লাল রায় রংপুরের শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের জন্ন রেখেছিলেন দারুণ অবদান। ১৯৫৫ সালে কুমার গোপাল লাল রায় এর মৃত্যুর পর অস্ত যায় রংপুর জমিদার বারির সেই আভিজাত্য আবং সেই জমিদারিত্বের ।
কুমার গোপাল লাল রায় এর মৃত্যুর 29 বছর পর ১৯৮৪ সালে থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এই প্রাসাদটি রংপুর হাইকোর্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসে পরে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রাসাদটি সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে এবং বাংলাদেশ সরকার এ স্থাপনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে স্থানান্তরিত করে এই প্রাসাদের দোতালায় নিয়ে আসে ।
কালের বিবরতন এ রংপুর তাজহাট জমিদার বারির সেই সোনালি সূর্যটা ধিরএ ধিরে আস্ত জেতে থাকে , একে একে হাড়িয়ে জেতে থাকে জমিদার দের নাম ও তাদের জমিদারি । সেই জমিদার আর তার জমিদারি আজ নাই কিন্তু ঝলমলে অতিত এর উজ্জল অলোয় মাথা উছু করে দারিয়ে আছে রংপুর এর এই তাজ হাট জমিদার বাড়িটি।
বাহ্যিক দিক থেকে রংপুর তাজহাট জমিদার বাড়ির মত দেখতে পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে । ১৮৫৯ সালে নবাব আব্দুল গনি এই প্রাসাদটি নির্মাণ করে তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ নাম অনুসারে এই প্রাসাদের নাম আহসান মঞ্জিল রাখেন,
আহসান মঞ্জিল সম্পর্কে জানতে আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল আইকনটি অন করে রাখূন যেন পরবর্তী ভিডিও আপলোড হওয়া মাত্র আপনার কাছে পৌঁছে যায়
আমাদের আজকের ভিডিও কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন