মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি

১৮৮৯ সালে বাবু রাম রতন ব্যানার্জি এই জমিদার বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন ৬২ বিঘা জমির উপর স্থাপিত এই প্রাসাদটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯০৯ সালে , ঢাকা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপপুর উপজেলায় অবস্থিত মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি, এই পর্বে আজ আপনাদের নিয়ে যাব শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও শতবর্ষী এই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে।জানাবো ইতিহাসের পরদে চাপা পড়া এই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির ইতি কথাগুলো।
নারায়ণগঞ্জ জেলার উত্তর-পূর্ব দিকে রুপপুর উপজেলার মুড়াপাড়া নামক গ্রামে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত মুড়াপাড়া জমিদারবাড়িকে মঠের ঘাট জমিদার বাড়ি নামেও অভিহিত করা হয় ।
বাবু রাম রতন ব্যানার্জি তৎকালীন সময়ে নাটোর স্টেটের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন । তার সততা এবং দক্ষতার কারণে তিনি নাটোরে আল্প সময়ে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন, ধীরে ধীরে তার পরিচিতি ব্যাপকতা পেলে তিনি বেশ কিছু জায়গায় প্রভাব বিস্তার শুরু করেন তার এই প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে তাকে সে সময় জমিদার হিসাবে ঘোষণা করা হয় । বাবু রাম রতন ব্যানার্জি এই প্রাসাদ নির্মাণ কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে এই এলাকায় মুড়াপাড়া জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন, ১৮৮৯ সালে বাবু রাম রতন ব্যানার্জি এই প্রাসাদের নির্মাণকাজ শুরু করেন এই সুবিশাল প্রাসাদটির নির্মাণ কাজ চলাকালীন অবস্থায় বাবু রাম রতন ব্যানার্জি মৃত্যুবরণ করেন ।
এরপর তাঁর বেশ কয়েকজন বংশধর কর্তৃক এই প্রাসাদটি নির্মাণ,পুননির্মাণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণ এর কাজ করা হয় ।
এর প্রেক্ষিতে ১৮৮৯ সালে তাঁর পুত্র প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জি এই প্রাসাদের পিছনে আরো একটি ভবন নির্মান করেন এবং পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন, পরে ১৮৯৯ সালে প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জি এই প্রাসাদের সামনের অংশ পূর্ণ নির্মাণের কাজ শুরু করেন এবং এই প্রাসাদের সামনে ও পিছনে দুটি পুকুর খনন করেন । ১৯০৯ সালে প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জির দুই পুত্র জগদীশচন্দ্র ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জি এই প্রাসাদের দ্বিতীয় তলা নির্মাণের মধ্য দিয়ে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি সম্পূর্ণরুপে আত্মপ্রকাশ করে ।
কয়েক প্রজন্মের স্বপ্ন ও অপার ভালোবাসায় তৈরি করা এই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি এখনও যেন তার অতীত উপসংহার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে হয়ত এখনো এই প্রাসাদটি তার সোনালি সূর্যকে একটি বারেব জন্য আলিঙ্গন করতে চায়। দোতলা বিশিষ্ট এই জমিদার বাড়িতে রয়েছে ৯৫ টি কক্ষ রয়েছে দৃষ্টিনন্দন নাচঘর,মন্দির,কাচারি ঘর,আস্তাবল,সামগ্রী ভান্ডার, অতিথিশালা, বৈঠকখানা সহ স্বচ্ছ পানির পাড় ঘেরা দুটি পুকুর ।প্রাসাদের প্রবেশমুখের প্রধান ফটক জমিদারবাড়ির বিশালতার প্রমাণ দেয় অনেক দূর থেকেই এবং এ প্রাসাদের প্রধান সড়কের দু’পাশে রয়েছে পুরনো দুটি মঠ। মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির নিখুঁত কারুকাজ এবং এর বিশালতা বলে দেয় কতটা সৌখিন ছিল বাবু রাম রতন ব্যানার্জি ও তার বংশধর ।
১৯৫৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জি তার পরিবার নিয়ে কলকাতায় গমণ করেন এরপর প্রাসাদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় বেশ কিছু দিন পরে থাকে , পড়ে থাকা এই প্রাসাদে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৪৮ সালে হসপিটাল ও কিশোরী সংশোধনাগার এ রূপান্তরিত করেন । ১৯৬৬ সালে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজি গোল বক্স ভূঁইয়ার উদ্যোগে এই প্রাসাদটিতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় । বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই প্রাসাদটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করেন এবং বর্তমানে এই প্রাসাদটি মুড়াপাড়া কলেজ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে ।
জমিদার এবং তাদের উত্তরসূরি এ রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে গেছে অনেক আগেই কিন্তু এখনো যেন তারুণ্যতা জরিয়ে আছে এই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির প্রতিটি পরোতে । কালের বিবর্তনে ইতিহাসের পাতায় চাপাপড়া এই প্রাসাদটি এখনো তার শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে , দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে হয়ত এখনো এই প্রাসাদটি তার সোনালি সূর্যকে একটি বারেব জন্য আলিঙ্গন করতে চায় ,হয়তো ফিরে পেতে চায় কালের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া সেই আভিজ্যাতের অহংকারকে । ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী
প্রতিষ্ঠা করেন ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি যা স্থানীয়দের কাছে নবাব প্যালেস বার নবাব মঞ্জিল নামে পরিচিত আমাদের পরবর্তী ভিডিওতে আপনাদের নিয়ে যাব ঢাকা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে থাকা ধনবাড়ী জমিদার বাড়িতে। জানাবো মুঘল স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য নিদর্শন ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি নবাব প্যালেস সম্পর্কে
আমাদের আজকের ভিডিও কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন সবাই ভাল থাকবেন ধন্যবাদ ।