ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়া

মাটির গভীরে গেলে যেখানে প্রাকৃতিক তেল ও জ্বালানি সম্পদ পাওয়া যায় সেখানে এক ফোঁটা পানযোগ্য পানির জন্য হাহাকার চলে সমুদ্রের পানি কে অনেক পরিশোধন এর মধ্য দিয়ে ব্যবহার উপযোগী করতে খরচ হয় প্রচুর অর্থ এবং ক্রমানয়ে সে দেশের তাপমাত্রার পারদ পেরিয়ে যাচ্ছে ৪৬ ডিগ্রির উপরে , বলছি বিশ্বের অন্যতম শুষ্ক ও রুক্ষ দেশ আরব আমিরাতের কথা । তবে এই গরম সুস্ক্তা ও পানযোগ্য পানির সংকট নিরসনে আরব আমিরাত সরকার নিয়েছে এক অত্যাধুনিক সিদ্ধান্ত , অনেকটা প্রকৃতির বিপরীতে গিয়ে বৃষ্টি নামানো সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার , প্রকৃতির বিপরীতে গিয়ে বৃষ্টি নামানোর এই প্রক্রিয়াকে বলে ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়া ।
ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার আগে জেনে আসা যাক বৃষ্টি কিভাবে হয় , পৃথিবীর বুকে বৃষ্টি হওয়ার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সূর্য , সূর্যের তাপে যখন ভূপৃষ্ঠের পানি গরম হয় তখন তা জলিয়ে বাষ্পাকারে উড়ে গিয়ে আকাশে জমতে থাকে এবং তখন পানির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই ড্রপলেট গুলোকে মেঘের মত দেখায় কিন্তু মেঘের মধ্যকার ড্রপলেট গুলো সেসময় পানির পিওর ফরমেটে থাকে এবং সেখানে অন্য কোন উপাদান থাকে না বলে তা ভেসে বেড়াতে থাকে , কিন্তু যখনই ড্রপলেট গুলো ধুলো অথবা ধোয়ার সংস্পর্শে আসে তখন তা বড় ড্রপলেট এর আকার ধারণ করে এবং পৃথিবীর গ্রাভিটির কারণে তা বৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ে এটাই হলো বৃষ্টি হওয়ার বেসিক ফাংশন ।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কি করে বৃষ্টি নামনো সম্ভব , তবে তার আগে ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়ার একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জেনে আসা যাক , ১৯৪৬ সালে ভিন্সেন্ট সারফার নামে এক আমেরিকান বিজ্ঞানী এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন সেসময় তিনি সিলভার আয়োডাইড নামে এক রাসায়নিক উপাদান কে মেঘের উপর ছিটিয়ে দেয়া হতো এবং এর ফলে মেঘের মধ্যে থাকা পানির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা গুলো একে অন্যের সাথে মিলিত হতে বাধ্য হতো এরপর এই পানির ফোঁটা গুলো পৃথিবীতে ঝরে পড়তো , ১৯৬৭ সালে আমেরিকা এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকায় ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে জয় লাভ করে, শুনতে অবাক লাগলেও এটা সম্পূর্ণরূপে সত্যি কথা।
৫ বছর চলমান এই যুদ্ধে আমেরিকা প্রতিবছর বর্ষাকালে ভিয়েতনামের বর্ডারে ক্লাউড সিডিং করত এর ফলে সেই বছরগুলোতে ভিয়েতনামের বর্ষাকাল বৃদ্ধি পেত যার ফলে ভিয়েতনামের আকস্মিক বন্যা ভূমিধস সহ বেশকিছু দুর্যোগ দেখা যেত যার কারণে ভিয়েতনাম ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছিল আমেরিকা এই মাস্টারপ্ল্যান কে অপারেশন পপাই নামে অভিহিত করেছিল ।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রকৃতির বিপরীতে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে কি করে নিজেদের স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে চলেছে , এ প্রক্রিয়ার জন্য আরব আমিরাত কিছু অত্যাধুনিক ড্রোন ব্যবহার করে এই ড্রোনের মাধ্যমে বাষ্পীভূত মেঘের উপর সোডিয়াম ক্লোরাইড ছিটিয়ে দেওয়া হয় পরে এই বাষ্পীভূত মেঘেগুলো সোডিয়াম ক্লোরাইডের সংস্পর্শে আসে ঘনীভূত হতে থাকে এবং এর প্রায় এক পর্যায়ে পৃথিবীর বুকে তা ঝড়ে পড়ে ।
এ প্রকল্পের প্রধান গবেষক মার্টেন অ্যামবাউম জানান আরব আমিরাতের উপর যে পরিমাণ মেঘ পুঞ্জিভূত হয় তা থেকে ভালো পরিমাণ বৃষ্টি নামানো সম্ভব । ২০১৭ সালে হাতে নেওয়া ১.৫ কোটি ডলারের প্রকল্প অবশেষে আসার বৃষ্টি দেখল ।
দর্শক আরব আমিরাতের এই উদ্বোধনী প্রযুক্তি কতটা সফল হবে এবং প্রকৃতির জন্য কতটুকু নিরাপদ তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আমাদের ভিডিও ভালো লাগলে সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকা বেল আইকনটি অন করে দিন ধন্যবাদ ।